রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বিখ্যাত গল্প অবলম্বনে নাটক দৃষ্টিদান। কুমুদিনীর ডাক্তার স্বামী অবিনাশের ভুল চিকিৎসায় কুমুদিনীর দুই চোখ নষ্ট হয়ে গেলো

 


নিজস্ব প্রতিনিধি , কলকাতা: করোনা অতিমারীর প্রকোপ একটু কম হওয়া তে আমাদের রাজ্য সহ শহর কলকাতায় বিভিন্ন হলে শুরু হয়ে গেছে নানা ধরণের বিনোদন তার মধ্যে অন্যতম নাট্যচর্চা। কলকাতার বহু হল বা প্রেক্ষাগৃহে ইতিমধ্যে রমরমিয়ে চলছে নাটক বা থিয়েটার। আমাদের প্রিয় শহরে গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি কলকাতার তপন থিয়েটারে মঞ্চস্থ হলো দক্ষিণ কলকাতা কলাকুশলীর নবতম প্রযোজনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বিখ্যাত গল্প অবলম্বনে নাটক দৃষ্টিদান। কুমুদিনীর ডাক্তার স্বামী অবিনাশের ভুল চিকিৎসায় কুমুদিনীর দুই চোখ নষ্ট হয়ে গেলো।  কুমুদিনীর দাদা সুবিমল কুমুদিনীর অনিচ্ছা সত্বেও বড় ডাক্তার নিয়ে এলো তার চোখের চিকিৎসার জন্য। পতিভক্তির পরাকাষ্ঠায় কুমুদিনী বড় ডাক্তারের ঔষুধ গ্রহণ করলেন না। সংসারে অন্ধ স্ত্রী যাতে গলগ্রহ না হয় তাই অবিনাশের পিসিমা তার ভাইজি হেমাঙ্গিনীকে নিয়ে এলেন অন্ধ বৌয়ের দেখাশোনা করবার জন্য।  কালক্রমে হেমাঙ্গিনীকে বিয়ে করার আশায় অন্য অজুহাতে অবিনাশ বাড়ি ছাড়লেন।  কিন্তু হেমাঙ্গিনীর বিয়ে হলো কুমুদিনীর দাদা সুবিমলের সাথে।  অবিনাশ ও নিজের ভুল বুঝতে পেরে তার অন্ধ স্ত্রী কুমুদিনীকেই কাছে টেনে নিল। আদ্যপান্তে এই নাটকে চরম পতিভক্তির এক অবিস্মরণীয় কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। যেটা আজকের দুনিয়ায় ভাবা প্রায় অসম্ভব বলা চলে। 

অভিনয় গুন সমৃদ্ধে এই নাটক আগাগোড়া দর্শকদের আবেগ স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এই নাটকের নির্দেশিকা রাজশ্রী মুখ্য চরিত্র কুমুদিনীকে তার নিখুঁত অভিনয় দ্বারা বেশ সুচারুভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। তার মঞ্চ ও পোশাক ভাবনা তৎকালীন যুগের সাথে বেশ মানানসই। দ্বিতীয় প্রধান চরিত্র অবিনাশের ভূমিকায় সুদর্শন দাস বেশ সপ্রতিভ ও স্বাভাবিক। দর্শকদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন অভিনেতা সুদর্শন।



ড: রায়, সুবিমল, পিসিমা ও শোভনের চরিত্রে যথাক্রমে তাপসী কুমার, নীলাঞ্জন পাল, পাপড়ি দাস ও শোভন চক্রবর্তীর অভিনয় দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অন্যান্য চরিত্রে অভিনন্দা পাল, দেবাশীষ সান্যাল ও অপর্না পাকিরা বেশ মানানসই  ও সাবলীল।

বাবলু সরকারের আলো ও সৌমেন দত্তর আবহ নাটকের মুহূর্ত গুলো কে আরও মুগ্ধ করে তুলতে সক্ষম হয়েছে। 

এই নাটকের দল বয়সে নবীন হলেও পরিনত অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের নিরলস পরিশ্রমে সার্থক করে তুলেছে তাদের এই নবতম প্রয়াস দৃষ্টিদান। সেদিক থেকে নাটকের নির্দেশিকা রাজশ্রী পূর্ণ শতাংশ কৃতিত্বের অধিকারী। পরিশেষে বলা যেতে পারে এই নাটক আদ্যন্ত  পারিবারিক জীবনে, ক্ষয়িষ্ণু ভালোবাসার সমাজে এক শিক্ষনীয় দলিল হতে পারে বলে মনে হয়। 

এই নাটক সকলের দেখার ও হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করার।

Comments

Popular posts from this blog

বঙ্গ গৌরব উৎসব সম্মান পেলেন মৌসুমী দাস

বেলঘরিয়া থানার পুলিশের উদ্যোগে উদ্বার বেআইনি একাধিক স্কুটি

সমাজ সেবা করাই নেশা নীলকণ্ঠের