তৃণমূলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর কংগ্রেসের অপদার্থতা
কলমে - সৌগত দত্ত , রাজনৈতিক বিশ্লেষক
হয়তো ভেবেচিন্তেই সম্প্রতি রাজনৈতিক রণকৌশলী প্রশান্ত কিশোর বলেছেন যে , বিজেপি এখন দশকের পর দশক ক্ষমতার সাথে জাতীয় রাজনীতিতে স্থান দখল করে থাকবে । কারণ এই মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি নামক মহাশক্তির বিরুদ্ধে মোকাবেলার জন্য এককভাবে যথেষ্ট নয় কোনো রাজনৈতিক দলই । তাই ভারতের বিরোধী রাজনীতিতে একমাত্র আশার আলো দেখাতে পারে বিরোধী মহাজোট । কিন্তু জোটের অঙ্কের জটিলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে আবারও হয়তো ২০১৯ এর মতোই ২০২৪ এও মুখ থুবড়ে পরতে পারে বিরোধীরা । দেশের বিরোধী মহাজোটের সবথেকে বড়ো অস্বস্তি হল তৃণমূলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং কংগ্রেসের অপদার্থতা । কারণ তৃণমূল হল এমন একটি রাজনৈতিক দল যা কাগজে -কলমে ' সর্বভারতীয় ' কিন্তু বাস্তবে পশ্চিমবঙ্গভিত্তিক আঞ্চলিক দল । আর অন্যদিকে বর্তমানে ভারতে বাস্তবিক ক্ষেত্রে বিজেপির সামনে একমাত্র ন্যাশানাল পার্টির অস্তিত্ব নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে কোনোভাবে টিকে আছে কংগ্রেস । এটা ঠিক যে , পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস ভেঙে গড়ে ওঠা সেই তৃণমূল কংগ্রেস পার্টিটি আজ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পরাজিত করার দম্ভে আজ দেশজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে । পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতার আসন অটুট থাকার পর জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে তৃণমূলের চোখ যায় ত্রিপুরার দিকে এবং বর্তমানে নজর সুদূর সৈকতভূমি গোয়া , এমনকি বিজেপির শক্ত ঘাঁটি উত্তরপ্রদেশের দিকেও । কিছুদিন আগে তামিলনাড়ুতেও ' মমতা আম্মা ' নামেও পোষ্টার দেখা গেছিল তামিল ভাষায় । ইতিমধ্যেই গোয়ায় রাজনৈতিক মাটিকে শক্ত করতে মাঠে নেমেছেন স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এভাবেই জাতীয় স্তরে মমতা ব্যানার্জির মুখ কে সামনে রেখে ক্রমশ পশ্চিমবঙ্গ নির্ভর রাজনীতিকে ত্যাগ করে যেন যথাযথভাবেই 'সর্বভারতীয় তৃণমূল-কংগ্রেস ' হয়ে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল । এই দুঃসাহসিক চেষ্টাই যেন কংগ্রেস ও তৃণমূলকে পরস্পরের চক্ষুশূল করে তুলছে , যা ২০২৪ এর আগে মহাজোট গঠনের কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে শুরু করেছে । কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপিকে হারানোর জন্য একজোট হওয়া কতটা প্রয়োজন , সেটা প্রায় আজ থেকে প্রায় ৩ মাস আগে মমতা ব্যানার্জির দিল্লি সফরে গিয়ে হিন্দিতে বলা সেই বক্তব্যের মধ্যেই বোঝা গেছিল , " বিজেপিকে হারানোর জন্য সকলকে এক হওয়া জরুরি ....আমি একলা কিছুই নয় , সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে ..." । গত ২৮ শে জুলাই নাগাদ দিল্লি সফরকালে সোনিয়া গান্ধীর সাথে বৈঠকও করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কিন্তু সম্প্রতি বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে গতকালই তৃণমূলের মুখপত্র 'জাগো বাংলা' পত্রিকার সম্পাদকীয়তে কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ ও কটাক্ষ করতে দেখা গিয়েছে । অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোয়ায় রাজনৈতিক অভিযান নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী । এইসময় বিজেপির বিরুদ্ধে একসাথে কাজ করার তুলনায় যেন প্রত্যেক রাজ্যে কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে এককভাবে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে পরিচিতি লাভ করাই একমাত্র লক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের । তাই মনে হচ্ছে এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে সংগঠন বিস্তারের ভাবনাকে ভুলে কেবল দেশজুড়ে অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়াসেই ব্যস্ত থাকতে হবে কংগ্রেসকে । এভাবে চলতে থাকা পরিস্থিতির শেষে যদি জোট হয়েও থাকে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে , তাহলে সেই জোটে কংগ্রেসের প্রভাব কতখানি থাকবে তা অতি সহজেই অনুমান করা যায় ।
আর অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তৃণমূলের জন্ম দেওয়া সেই ' বহিরাগত তত্ত্ব ' -ই জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের কাল হয়ে দাঁড়াবে বারবার । ইতিমধ্যেই যেটার মুখোমুখি হতে হচ্ছে মমতা ব্যানার্জিকে গোয়াতে । তাই পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্যান্য রাজ্যগুলিতে কংগ্রেস বা অন্যান্য দলগুলি ভাঙিয়ে তৃণমূল নিজেদের দল ভারী করে প্রধান বিরোধী দল পর্যন্ত হয়ে উঠলেও কোনো রাজ্যেই বিজেপিকে টেক্কা দিতে পারবে না । সুতোরাং এইভাবে অদূর ভবিষ্যতের জাতীয় স্তরে বিরোধী রাজনীতির খেলায় দিনের শেষে ধ্বংস হতে পারে কংগ্রেস , আশাহত পারে পুরো বিরোধী জোট এবং বিরোধী হিসেবে রাজনীতির বাজারে মুনাফা তুলতে পারবে একমাত্র তৃণমূল ।
About Channel: Sothik Barta is a online news channel which covers the entire social media platform. Political, non-political,entertainment, crime, talk show, debate show are present in this channel. It cover different news from different areas, cities and districts news.
Our website: www.sothikbartaofficial.blogspot.com
Social Media Handles:
Facebook: https://www.facebook.com/sothikbarta/
Youtube : https://www.youtube.com/channel/UCSGKtL8ZT5NG966FG-L96
Twitter: https://twitter.com/SothikBarta
Comments
Post a Comment