" তুমি রবে নিরবে" 



   ছবি - কৃষ্ণা বসু 
নিজস্ব প্রতিবেদন, কলকাতাঃ ভারতের একজন রাজনীতিবিদ তথা শিক্ষাবিদ কৃষ্ণা বসু শনিবার সকালে কলকাতার বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৮৯ বছর ।  প্রথমে নেতাজি ভবনে তাঁর 
মৃতদেহ রাখা হয় । তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় , সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় , রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় এবং বহু সাহিত্যিকরা । কেওড়াতলা মহাশশ্মানে গান স্যালুট দিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় ।  



                                                                                      ছবি ঃ  কৃষ্ণা বসু 


 ছবি ঃ শিশির বসুর সাথে কৃষ্ণা বসু  
প্রাক্তন সাংসদ কৃষ্ণা বসুর মৃত্যুর সংবাদে
শিক্ষামহলের পাশাপাশি রাজনীতিতে এক উজ্জল নক্ষত্র হারিয়ে গেল। ১৯৩০ সালের ২৬শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের ঢাকায় জন্ম তাঁর । বিখ্যাত সাংবিধানিক অধ্যায়ন বিশেষজ্ঞ চারুচন্দ্র চৌধুরী এবং  ছায়া দেবী চৌধুরাণীর সন্তান ছিলেন তিনি । ছোট্ট থেকেই পড়াশুনোর প্রতি ঝোঁক বেশ ছিল । ১৯৫০ সালে উচ্চশিক্ষার জন্যে মাত্র ২০ বছর বয়সে কলকাতায় চলে আসেন কৃষ্ণা দেবী । এখানে এসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষায় স্নাতকোত্তর কোর্স সম্পন্ন করে  বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি । 



                                   ছবিঃ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর সাথে কৃষ্ণা বসু 

বিশিষ্ট লেখক মামা নীরদচন্দ্র চৌধুরীর ভাগ্নি ছিলেন কৃষ্ণা বসু । মামার হাত ধরেই জীবনসঙ্গী শিশিরকুমার বসুর সাথে আলাপ তাঁর । কারণ তাঁর মামা নীরদচন্দ্র চৌধুরী ছিলেন নেতাজীর মেজদাদা শরৎকুমার বসুর personal assistant।  সেই সূত্রে শিশিরকুমার বসুর সাথে কৃষ্ণা বসুর আলাপ শুরু হয় । আর সেখান থেকেই প্রেম । ২৫ বছর বয়সে  ১৯৫৫ সালের ৯ই ডিসেম্বর নেতাজী পরিবারের গৃহিণী হয়ে আসেন ।  
                                                                     ছবিঃ কৃষ্ণা বসু

ইংরেজি বিভাগে ৪০ বছর কলকাতা সিটি কলেজে অধ্যাপনা করেন তিনি। তারপর কলেজের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি । লক্ষৌ থেকে সঙ্গীত বিশারদ ডিগ্রিতে তাঁকে সন্মানিত করা হয় । শিক্ষাবিদ কৃষ্ণা বসুর তিন সন্তান ঃ দুই ছেলে সুমন্ত্র, সুগত এবং একটি মাত্র কন্যা শর্মিলা বসু । তিন সন্তানই ছিলেন কৃতি ছাত্রছাত্রী । পড়াশুনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক দিকেও ছিলেন মায়ের মতই প্রতিভাবান । 



১৯৯৬ সালে জাতীয় কংগ্রেসের হাত ধরে রাজনীতিতে আসা । যাদবপুর কেন্দ্র থেকে পরপর তিনবার তিনি সাংসদ হিসাবে 


নির্বাচিত হন ।  ১৯৯৬ এ  ১১ তম নির্বাচনে এবং তারপর ১৯৯৮ - ২০০৪ সালে দু'বার  ১২ তম 

এবং ১৩ তম নির্বাচনে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচিত হয় । 



১৯৯৯ সালে পেটেন্টের যৌথ কমিটির সংশোধনী বিলের সদস্য ছিলেন কৃষ্ণা দেবী । তার পাশাপাশি তিনি অফিসিয়াল ভাষা কমিটির সদস্যও ছিলেন । তিনি ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানের ভুমিকাতেও কিছুদিন যুক্ত ছিলেন । 



ঢাকার মেয়ে কৃষ্ণা বসু বড় হয়ে ওঠেন প্রকৃতির কোলে । তাই রাজনীতির পাশাপাশি সাধারণের জন্যে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি । জনস্বার্থে কলকাতা ইনস্টিটউট অব চাইল্ড হেল্ড ট্রাস্টের প্রেইডেন্ট ছিলেন তিনি । নারী সুরক্ষার জন্যে তাঁর সক্রিয় অবদান ছিল অপরিসীম । অনগ্রসর শ্রেণীর নারী এবং শিশুদের জন্যে গঠিত একটি সংস্থা 'বিবেক চেতনা' র প্রেসিডেন্ট ছিলেন কৃষ্ণা দেবী । 


   ছবি - কৃষ্ণা বসু 
কৃষ্ণা বসু একজন দক্ষ কলামিস্টও ছিলেন । ইংরেজি এবং বাংলা ভাষার বহু পত্রিকায় কলাম লিখতেন । "দেশ" , "আনন্দবাজার পত্রিকা" , "অমৃতবাজার পত্রিকা", "টেলিগ্রাফ"  , "দ্য স্টেটসম্যান" ইত্যাদি বহু পত্রিকায় তাঁর লেখা বহু আর্টিক্যাল , কলাম পাঠকদের মুগ্ধ করেছে ।  

                                                                                                                                 

তিনি বহু বই , গ্রন্থও রচনা করেছেন । "শেষ কবিতা" , "চরণ রেখা তবে" , "এক নম্বর কড়ি" , "পার্লামেন্টের অন্দরমহল" প্রমূখ বই  তিনি নিজে লিখেছেন । এক কথায় বলা যায় , সাহিত্যেক জগতে এক বিরাট অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল আজ । ( ২২শে ডিসেম্বর , ২০২০) 





Comments

Popular posts from this blog

বঙ্গ গৌরব উৎসব সম্মান পেলেন মৌসুমী দাস

বেলঘরিয়া থানার পুলিশের উদ্যোগে উদ্বার বেআইনি একাধিক স্কুটি

সমাজ সেবা করাই নেশা নীলকণ্ঠের