" তুমি রবে নিরবে"
ছবি - কৃষ্ণা বসু |
মৃতদেহ রাখা হয় । তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় , সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় , রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় এবং বহু সাহিত্যিকরা । কেওড়াতলা মহাশশ্মানে গান স্যালুট দিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় ।
ছবি ঃ কৃষ্ণা বসু
ছবি ঃ শিশির বসুর সাথে কৃষ্ণা বসু |
শিক্ষামহলের পাশাপাশি রাজনীতিতে এক উজ্জল নক্ষত্র হারিয়ে গেল। ১৯৩০ সালের ২৬শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের ঢাকায় জন্ম তাঁর । বিখ্যাত সাংবিধানিক অধ্যায়ন বিশেষজ্ঞ চারুচন্দ্র চৌধুরী এবং ছায়া দেবী চৌধুরাণীর সন্তান ছিলেন তিনি । ছোট্ট থেকেই পড়াশুনোর প্রতি ঝোঁক বেশ ছিল । ১৯৫০ সালে উচ্চশিক্ষার জন্যে মাত্র ২০ বছর বয়সে কলকাতায় চলে আসেন কৃষ্ণা দেবী । এখানে এসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষায় স্নাতকোত্তর কোর্স সম্পন্ন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি ।
বিশিষ্ট লেখক মামা নীরদচন্দ্র চৌধুরীর ভাগ্নি ছিলেন কৃষ্ণা বসু । মামার হাত ধরেই জীবনসঙ্গী শিশিরকুমার বসুর সাথে আলাপ তাঁর । কারণ তাঁর মামা নীরদচন্দ্র চৌধুরী ছিলেন নেতাজীর মেজদাদা শরৎকুমার বসুর personal assistant। সেই সূত্রে শিশিরকুমার বসুর সাথে কৃষ্ণা বসুর আলাপ শুরু হয় । আর সেখান থেকেই প্রেম । ২৫ বছর বয়সে ১৯৫৫ সালের ৯ই ডিসেম্বর নেতাজী পরিবারের গৃহিণী হয়ে আসেন ।
ছবিঃ কৃষ্ণা বসু
ইংরেজি বিভাগে ৪০ বছর কলকাতা সিটি কলেজে অধ্যাপনা করেন তিনি। তারপর কলেজের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি । লক্ষৌ থেকে সঙ্গীত বিশারদ ডিগ্রিতে তাঁকে সন্মানিত করা হয় । শিক্ষাবিদ কৃষ্ণা বসুর তিন সন্তান ঃ দুই ছেলে সুমন্ত্র, সুগত এবং একটি মাত্র কন্যা শর্মিলা বসু । তিন সন্তানই ছিলেন কৃতি ছাত্রছাত্রী । পড়াশুনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক দিকেও ছিলেন মায়ের মতই প্রতিভাবান ।
১৯৯৬ সালে জাতীয় কংগ্রেসের হাত ধরে রাজনীতিতে আসা । যাদবপুর কেন্দ্র থেকে পরপর তিনবার তিনি সাংসদ হিসাবে
নির্বাচিত হন । ১৯৯৬ এ ১১ তম নির্বাচনে এবং তারপর ১৯৯৮ - ২০০৪ সালে দু'বার ১২ তম
এবং ১৩ তম নির্বাচনে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচিত হয় ।
১৯৯৯ সালে পেটেন্টের যৌথ কমিটির সংশোধনী বিলের সদস্য ছিলেন কৃষ্ণা দেবী । তার পাশাপাশি তিনি অফিসিয়াল ভাষা কমিটির সদস্যও ছিলেন । তিনি ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানের ভুমিকাতেও কিছুদিন যুক্ত ছিলেন ।
ঢাকার মেয়ে কৃষ্ণা বসু বড় হয়ে ওঠেন প্রকৃতির কোলে । তাই রাজনীতির পাশাপাশি সাধারণের জন্যে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি । জনস্বার্থে কলকাতা ইনস্টিটউট অব চাইল্ড হেল্ড ট্রাস্টের প্রেইডেন্ট ছিলেন তিনি । নারী সুরক্ষার জন্যে তাঁর সক্রিয় অবদান ছিল অপরিসীম । অনগ্রসর শ্রেণীর নারী এবং শিশুদের জন্যে গঠিত একটি সংস্থা 'বিবেক চেতনা' র প্রেসিডেন্ট ছিলেন কৃষ্ণা দেবী ।
ছবি - কৃষ্ণা বসু |
তিনি বহু বই , গ্রন্থও রচনা করেছেন । "শেষ কবিতা" , "চরণ রেখা তবে" , "এক নম্বর কড়ি" , "পার্লামেন্টের অন্দরমহল" প্রমূখ বই তিনি নিজে লিখেছেন । এক কথায় বলা যায় , সাহিত্যেক জগতে এক বিরাট অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল আজ । ( ২২শে ডিসেম্বর , ২০২০)
Comments
Post a Comment