পূর্ব কলকাতায় গাঙ্গোর মহোৎসব



শ্রীজিৎ চট্টরাজ : রাজস্থানের পৌরাণিক আখ্যান বলছে, শিব পার্বতী (গাঙ্গোর) একবার দেবর্ষি নারদকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন।আসেন রাজস্থানের একটি গ্রামে। গ্রামের নারী পুরুষ আরাধ্য দেবদেবীকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন। গরীব গ্রামবাসীরা তাঁদের সাধ্যমত অর্ঘ্য সাজিয়ে দেববরণ করেন।ভক্তদের সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবী গ্রামের মানুষদের সৌভাগ্যের বর দেন।সেই থেকে সেখানকার মানুষদের ভাগ্য খুলে যায়। মর্ত্যলোকে শুরু হয় শিব পার্বতীর পুজো গাঙ্গোর মহোৎসব নামে।

   

মূলত হোলিকা দহনের পরেরদিন অর্থাৎ আমাদের বাংলার নববর্ষের দিন উত্তর ও পশ্চিম ভারতের নব রাত্রির তৃতীয় দিন (শুক্ল পক্ষের তৃতীয় দিন)১৬ দিনব্যাপী গাঙ্গোর পুজো চলে।অবিবাহিত মেয়েরা শিবের মত স্বামীর প্রার্থনা জানায় দেবীর কাছে।আবার বিয়ের পর প্রথম বছরে মেয়েরা আবশ্যিক দেবীর পুজো করেন কৃতজ্ঞতাস্বরূপ।তাঁরা মনে করেন, তাঁদের প্রার্থনা মত দেবী শিবের মত স্বামী দিয়েছেন তাঁদের। অন্য বিবাহিত মহিলারাও প্রতি বছর দেবী পার্বতী অর্থাৎ গাঙ্গোরদেবীর পুজো করেন স্বামী সন্তানের মঙ্গল কামনায়।

কলকাতায়  বহুদিন ধরে আছেন বহু রাজস্থানী পরিবার।তাই কলকাতার বিভিন্ন স্থানে গাঙ্গোর পুজো অনুষ্ঠিত হয়।

   


পূর্ব কলকাতার মাহেশ্বরী সভা প্রতি বছরের মত এবারও পূর্ব কলকাতার ফুলবাগান অঞ্চলে একটি ব্যাঙ্কয়েটে আয়োজন করে গাঙ্গোর মহোৎসব।সংগঠনের সভাপতি হেমন্ত মাদ্রা,সম্পাদক রাজেশ চন্দক (সি এ)এবং কোষাধ্যক্ষ ভগবতী মুন্দ্রা আমন্ত্রিত সকলকে শুভেচ্ছা জানান। উৎসবে হাজির ছিলেন বহু রাজস্থানী পরিবার ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।যেমন সমাজসেবী কিরণ ভুয়েলকা, পোষাকশিল্পী তেজেশ গান্ধী প্রমুখ। ছিল পেট পুজোরও আয়োজন। ফুচকা, চাট মসলা,টিকিয়া চাট,মশলা মুড়ি, চা। কিন্তু একটা আক্ষেপ থেকেই গেল। রাজস্থানী ধর্মীয় উৎসবে কিছু বিশেষ খাবারের ঐতিহ্য আছে। সেগুলি কয়েকটি চেখে দেখার সুযোগ থাকলে সর্বাঙ্গসুন্দর হতো। যেমন- শিংহাদে হালুয়া, কুটটু কা পুরী, কেলে কি বরফি বা কাদ্দু কা রায়তা ইত্যাদি।বাংলার সঙ্গে রাজস্থানের যোগ বহুদিনের। ধর্মীয় সংস্কৃতির সঙ্গে খাদ্য সংস্কৃতির যুগলবন্দী কিন্তু দেশের ঐক্য গড়ে তোলার সহায়ক। আশা রইল আগামী বছরে উৎসব আয়োজকরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন।

Comments

Popular posts from this blog

বঙ্গ গৌরব উৎসব সম্মান পেলেন মৌসুমী দাস

বেলঘরিয়া থানার পুলিশের উদ্যোগে উদ্বার বেআইনি একাধিক স্কুটি

সমাজ সেবা করাই নেশা নীলকণ্ঠের