*শুধু হিন্দি দিবস কেন? প্রতিবাদে সপ্তাহব্যাপী "বাংলা ভাষা সপ্তাহ " পালন 'ঐক্য বাংলা'র *


নিজস্ব সংবাদদাতা,কলকাতা :
পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের বুকে বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে বিশেষ সদর্থক ভূমিকা নেওয়া হয়নি বলে অনেকদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে বাংলা ভাষাপ্রেমীদের। সেই সুরে সুর মিলিয়ে বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারের জন্য সপ্তাহব্যাপী অনলাইন কর্মসূচি 'বাংলা ভাষা সপ্তাহ' পালন করল বাংলার প্রথম মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন 'ঐক্য বাংলা'। 


কেন হঠাৎ পালন করা হল 'বাংলা ভাষা সপ্তাহ' ? 


উত্তরে 'ঐক্য বাংলা'র সাধারণ সম্পাদিকা শ্রীমতী সুলগ্না দাশগুপ্ত জানান , "দুঃখের বিষয় সংবিধানের ৩৫৩ ধারা - যার মাধ্যমে হিন্দির প্রচার প্রসার কে ভারত সরকারের একটি দায়িত্বের মধ্যে ফেলা হয়েছে - তার মাধ্যমে জাতি এবং ভাষা বৈষম্যকে কার্যত সাংবিধানিক বৈধতা দেয়া হয়েছে আমাদের দেশে। তাই অহিন্দি জাতির করের টাকায়, অহিন্দি জাতিগুলির ওপরেই হিন্দি কে জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কেন্দ্রীয় সরকার করে চলেছে ১৯৫০ এর সেই সংবিধান গ্রহণের মুহূর্ত থেকে। বস্তুত 14 ই সেপ্টেম্বর - যে দিনটি হিন্দি দিবস হিসেবে পালিত হয় - সেটি আসলে অহিন্দি জাতির কাছে একটি কালো দিন, কারণে এই দিন ভারতীয় ভাষা গুলির মধ্য থেকে একমাত্র হিন্দিকে ভারতের অফিশিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ এর মর্যাদা দেয়া হয়েছিল সাংবিধানিকভাবে। এই জাতি বৈষম্যমূলক হিন্দি দিবস বা হিন্দি পাখোয়ারা পালনের প্রতিবাদেই আমরা বাংলা ভাষার ওপর সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি 'বাংলা ভাষা সপ্তাহ' পালন করার সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করি।" 




কিভাবে পালন করা হল 'বাংলা ভাষা সপ্তাহ' ? 


ঐক্য বাংলার নেতৃস্থানীয় সদস্য অভিজিৎ গুহ নিয়োগী বলেন , " বর্তমান পরিস্থিতিতে পুরো কর্মসূচিটাই অনলাইনে , সামাজিক মাধ্যমে পালন করা হয়েছে। এখানে বাংলা ভাষা সম্পর্কিত বিভিন্ন অজানা তথ্য , বাংলা ভাষার বিভিন্ন দিক আমরা এক সপ্তাহ ধরে তুলে ধরি। বাংলা ভাষায় শিক্ষার ওপর ছিল বিশেষ গুরুত্ব।"


কি কি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এই "বাংলা ভাষা সপ্তাহ" কর্মসূচিতে ? 


সংগঠনের তরুণ সদস্য দেবায়ন সিংহ জানান , " বাংলা ভাষার অতীত , ইতিহাস , বিভিন্ন উপভাষা নিয়ে সেইভাবে কথা হয় না। তাই এটি বিষয় হিসেবে স্থান পেয়েছে। এছাড়াও বাংলা ভাষার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কোন দিকে যেতে পারে সেই বিষয়ে আমরা বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মতামত ও ভিডিও পেজ থেকে প্রকাশ করেছি। সেই সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে পণ্য পরিষেবা উচ্চশিক্ষা প্রয়োগ ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রয়োজনীতা। কিভাবে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ গ্ৰাস করছে বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থাকে সেই বিষয় আমরা সকলকে সাবধান করছি।  তবে বাঙালির সাথে যেহেতু বাংলা ভাষার আত্মিক যোগাযোগ রয়েছে , তাই কর্মসূচিতে স্থান পেয়েছে সমাজ সংস্কার ও শিক্ষা জগতে বাঙালির কৃতিত্বের কথাও।"


এই সময়ে কেন এই বাংলা ভাষা সপ্তাহ পালন করল 'ঐক্য বাংলা' ? 


ঐক্য বাংলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ঐক্যযোদ্ধা সৌম্য চৌধুরী বলেন , " ২৬ই সেপ্টেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিবস। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে অনেকেই এই দিনটাকে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করতে চাইছে। আমরাও পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে বিষয়টি তুলে ধরে একটি গণ ইমেইল কর্মসূচির আয়োজন করেছি যাতে এই দিনকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার সরকারি স্বীকৃতি দিক। তবে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যে লড়াই , নিজের মাতৃভাষা প্রসারের জন্য যে আহ্বান আমরা করেছি , ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিবসের চেয়ে উপযুক্ত তিথি বোধহয় আর হয় না , তাই এই সিদ্ধান্ত। " 



কর্মসূচিতে কি রকম সাড়া পেল ঐক্য বাংলা ? 


উত্তরে অভিজিৎ গুহ নিয়োগী জানান, " আমাদের সর্মথকরা এবং বাংলার শিক্ষক সমাজ আমাদের পাশে থেকে এই কর্মসূচিতে যারপরনাই অবদান রেখেছেন। অনেক সমার্থক শব্দ প্রণোদিতভাবে বাংলা ভাষা সংক্রান্ত তাদের গর্ব, হিন্দি চাপানোর অভিজ্ঞতা, এগুলি আমাদের সাথে সরাসরি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে আমাদের কে রিদ্ধ করেছেন। এছাড়া বাংলার শিক্ষক সমাজের অনেকেই বাংলা ভাষায় শিক্ষা নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা,  বর্তমান প্রজন্মের অভিভাবকদের হিন্দি প্রতি দুর্বলতা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা, ইত্যাদি আমাদের সাথে ভাগ করে নিয়েছেন।যেভাবে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন , তাতে এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই যে বাঙালি জাগছে।" 



এই অভিনব কর্মসূচি সত্যিই নজর কেড়ে নেয়। হয়তো এই কর্মসূচি বাঙালির সমাজকে একবারের জন্য হলেও প্রশ্ন করতে বাধ্য করবে: হিন্দির জন্য আলাদা দিবস হলে বাংলার জন্য নয় কেন? আর সেখানেই মাত্র সাত মাস ছোট্ট সংগঠন ঐক্য বাংলার জয়।

Comments

Popular posts from this blog

বঙ্গ গৌরব উৎসব সম্মান পেলেন মৌসুমী দাস

বেলঘরিয়া থানার পুলিশের উদ্যোগে উদ্বার বেআইনি একাধিক স্কুটি

সমাজ সেবা করাই নেশা নীলকণ্ঠের