বাঙালিকে অপমানের অভিযোগ:ঐক্য বাংলাকে হুমকি বিজেপির রাকেশ সিং এর



নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা : বেশ কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে অবাঙালি তোষণ করার জন্য। 

এবার কার্যতঃ সেই একই অভিযোগ উঠল বিজেপির নেতা রাকেশ সিং এর বিরুদ্ধে। 


ঠিক কি হয়েছিল ? 


জানা যাচ্ছে যে বেশ কয়েকদিন আগে শ্রীরামপুরের একটি জনসভায় বিজেপি নেতা রাকেশ সিং বলেন, "এক বিহারী শো প্যায় ভারী" । 

ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ আপামর বাঙালি সমাজ। 


তবে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এই বঙ্গ বিজেপি নেতার রোষের মুখে পড়ল বাংলার প্রথম মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন 'ঐক্য বাংলা'। 


কিন্তু কেন ?


'ঐক্য বাংলা'র সাধারণ সম্পাদিকা শ্রীমতী সুলগ্না দাশগুপ্ত জানালেন, " বিজেপি নেতা রাকেশ সিং শ্রীরামপুরে দাঁড়িয়ে যেভাবে বাংলার ভূমিসন্তানদের হুমকি দিলেন তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যথারীতি তাঁর এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে ফেসবুক ,টুইটার সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আমরা তার প্রতিবাদ জানাই।টুইটারে এই বিজেপি নেতা রীতিমত হুমকির সুরে আমাদের বলেন, আমরা যেন আবেগ নিয়ে না খেলি। 

পরে যখন আমরা তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করি তিনি বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে হিন্দি ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে বাংলার ভূমিসন্তানদের প্রতি উপেক্ষা প্রকাশ করছেন কিংবা বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি এই সুরে হুমকি দেওয়ার ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য কি তাঁর ব্যক্তিগত , নাকি এটা বিজেপির মত -  সেই বিষয়ে উনি কোনো উত্তর দেননি।" 


সুলগ্না দেবী আরো জানান, " আমরা শিরদাঁড়া সোজা রেখে বাংলার ভূমিসন্তানদের জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত। এখনও পর্যন্ত বাঙালি আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।রাকেশ বাবু বোধহয় ভাবতে পারেননি কোনো বাঙালি সংগঠন তাঁর এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে। তাই তিনি ভয় পেয়ে উল্টো পাল্টা বলছেন।"


তবে এখানেই শেষ নয়, রাকেশ সিং এর বাঙালির প্রতি অবজ্ঞাসূচক মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রবিবার ১৭ই জানুয়ারি বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার মোহরকুঞ্জের সামনে একটি প্রতিবাদসভার আয়োজন করল 'ঐক্য বাংলা'। 


কেন এই প্রতিবাদসভার আয়োজন করা হল? 


উত্তরে 'ঐক্য বাংলা'র শীর্ষস্থানীয় নেতা অভিজিৎ গুহ নিয়োগী বলেন, " প্রথমতঃ রাকেশ সিং যা মন্তব্য করছেন , বাংলার ভূমিসন্তানদের জন্য, বাঙালির জন্য তা চূড়ান্ত অবমাননাকর। অথচ কোথাও এই নিয়ে সেইভাবে প্রতিবাদ হচ্ছে না, সমস্ত রাজনৈতিক দলই এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সামাজিক মাধ্যমের পাশাপাশি পথে নেমে সাধারণ বাঙালিকে সচেতন করার প্রয়োজন রয়েছে, যে একজন  নেতা কিভাবে বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে বাঙালিকে হুমকি দিচ্ছে। ঠিক এই কারণেই রবিবার বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার মোহর কুঞ্জের সামনে এই প্রতিবাদসভার আয়োজন করা হয়।"প্রতিবাদসভা থেকে বেশ কড়া ভাষায় রাকেশ সিং এর মন্তব্যকে আক্রমণ করেন ঐক্যযোদ্ধারা। 


বিজেপির দ্বিচারিতা সম্পর্ক বলতে গিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন ঐক্য বাংলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ঐক্যযোদ্ধা সৌম্য চৌধুরী। তিনি বলেন, " রাকেশ সিং নিজেকে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য। বিনা প্ররোচনায় তিনি যে এই মন্তব্য করলেন, বিজেপি কিন্তু একবারের জন্যেও এই মন্তব্যের সমালোচনা করল না। তার মানে ধরেই নিতে হয় এতে বিজেপির প্রত্যক্ষ সমর্থন রয়েছে। অর্থাৎ এতে করেই স্পষ্ট বিজেপি যে "সোনার বাংলা" গড়তে চায়, তাতে বাঙালি এবং বাংলার ভূমিসন্তানদের নূন্যতম সম্মানও থাকবে না।" তবে এর মধ্যেও আশার আলো দেখছেন 'ঐক্য বাংলা'র তরুণ সদস্য ঐক্যযোদ্ধা দেবায়ন সিংহ। 


তিনি বেশ আত্মপ্রত্যয়ের সুরেই বললেন , " 'ঐক্য বাংলা' কে ভয় পাচ্ছেন বিজেপি নেতা রাকেশ সিং। সেই কারণেই তিনি ঠিক কি কারণে হুমকির সুরে"এক বিহারী শো প্যায় ভারী" বললেন , তার সদুত্তর দিতে পারেননি। আসলে তিনি বাঙালিকে আবেগকে ভয় পাচ্ছেন। চিন্তা নেই আগামী দিনে বাংলাদ্রোহী, বাঙালি বিদ্বেষীরা এইভাবেই বাঙালিকে ভয় পাবে।" 

এছাড়াও এদিনের প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন আরো দুজন তরুণ তুর্কি অরিন্দম নাগ ও যাজ্ঞবল্ক্য সিংহ। তাঁরা দুজনই জানান যেভাবে কোনো বিজেপি নেতার প্রতিবাদ করলে "শাসক ঘনিষ্ঠ" বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। কার্যতঃ একই সুরে ঐক্য বাংলার আর একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য অরিজিৎ শেঠ জানালেন যে যারা ঐক্য বাংলাকে শাসক ঘনিষ্ঠ বলে দাগালেও, ছটের সময়ে কিন্তু এদের রাজ্য সরকার বিরোধিতা করতে দেখা যায়নি। বরং তখন পথে ছিল 'ঐক্য বাংলা'। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যেভাবে বিজেপির নেতার চোখে চোখ রেখে লড়াই করল বাংলার প্রথম মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এখন এটাই দেখার যে ভবিষ্যতে তারা কিভাবে তাদের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়।

Comments

Popular posts from this blog

বঙ্গ গৌরব উৎসব সম্মান পেলেন মৌসুমী দাস

বেলঘরিয়া থানার পুলিশের উদ্যোগে উদ্বার বেআইনি একাধিক স্কুটি

সমাজ সেবা করাই নেশা নীলকণ্ঠের