প্রথম মিনি সাহিত্য পত্রিকার ৫০বছর সমালোচনা
বাণীব্রত দত্ত, ত্রিপুরা: ত্রিপুরায় প্রথম মিনি সাহিত্য পত্রিকা পৌণমী প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে । মে দিবসের দিনে। পত্রিকার সম্পাদনায় ছিলেন কবি রাতুল দেববর্মণ ও কথাকার নিলিপ পোদ্দার। প্রথম সংখ্যায় পত্রিকাটি ছিল একেবারে মিনি সাইজের । পত্রিকায় প্রথম সংখ্যায় লেখক সূচিতে ছিলেন কবি স্বপন সেনগুপ্ত ,কবি বিজন কৃষ্ণ চৌধুরী , সলিলকৃষ্ণ দেববর্মন, কবি মিহির দেব,অমল কুমার মিত্র, অমিতাভ কর ,শিশির দেব,সত্য দত্ত, এবং সুজয় রায়। প্রথম সংখ্যার অলংকরণ করেছিলেন চিত্রশিল্পী পার্থ প্রতিম গাঙ্গুলী। প্রচ্ছদ করেছিলেন সম্পাদক নিলিপ পোদ্দার নিজেই।
প্রথম সংখ্যায় সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল "এ মিনি সে মিনি নয় যখন ইউরোপ ও আমেরিকায় আর্থিক স্বচ্ছলতার চরম বহিঃপ্রকাশ মিনি,ইপি,হিপি,যার ঢেউ আমাদের দেশের কিছু তরুণ তরুণীকে সে পথে ঠেলে দিচ্ছে তখুনি গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এই সাহিত্য পত্রিকা হাজির করছি আপনাদের দরবারে ।ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আর্থিক অসচ্ছলতার অবশ্যাম্ভাবী ফলশ্রুতি পত্রিকায় মিনি আয়তন।মোদ্দা কথা হীরে যখন পাচ্ছি না তখন পদ্ম পাতায়
এক ফোটা শিশিরবিন্দু নিয়ে হীরের আনন্দই মেতে থাকতে দোষ কি? সবশেষে ত্রিপুরা থেকে প্রথম মিনি পত্রিকা প্রকাশের এই শুভ প্রচেষ্টার ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল লেখক আর পাঠকের সর্বাঙ্গীন সহযোগিতার উপর।
প্রথম সংখ্যাতেই দারুণ দারুণ কবিতা উপহার পেয়ে যাই আমরা। এই সংখ্যায় কবিতা লিখেছেন বিজনকৃষ্ণ চৌধুরী। লিখেছেন, কি হইবে আর নোংরা চিৎকার চারিদিকে লেখাজোকা আঁকিবুকি কি বিশ্রী বলিলেন শান্তি প্রিয় নাথ। অথচ উপায়হীন; যদি নেয় তার থেকে জন্ম নেবে প্রত্যয়ের পুরুষ সবল স্নিগ্ধজ্জ্বল হাত।"
কবি সলিলকৃষ্ণ দেববর্মনের
'শরক্ষেপ' নামে কবিতায় লিখেছেন-
" সোনার পাখিটা হঠাৎ রক্তাক্ত হয়েই আমার বুকের কাছে
জীবনের আমূল বৃক্ষের কোন স্বাদ পেতে আমার বাগানে ঝরে পড়ে।
রৌদ্রের অভাবে রাত্রি ,মন্ত্রপাঠ বিকেলের বৃষ্টিতে ভিজে
বাগানের অমূল বৃক্ষরা
দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে জ্ঞানী বৃদ্ধ যখন আবার কুমারী লতায় ফুলঝরে অবশেষে রামনাম"
কবি স্বপন সেনগুপ্তের একটি চমৎকার কবিতা ' বিষাদ'। প্রকাশিত হয়েছিল পৌণমী র প্রথম সংখ্যায়। কবি পঙক্তিমালা সাজিয়েছেন এইভাবে-
" একসময় খরগোশের মত ধারাল কান
এবং স্রোতের মতো রক্তের বয়েস একসময়
রোদ ও বৃষ্টির ধান সমান সমান এবং
কিশোরী মুখের মত মাদক বয়েস
হাত ধরে
অথচ আবার জোচ্চোর মাতাল সময় আসে
টেপ রেকর্ড বাজলেও স্বকীয় কন্ঠ চেনা ভার।"
কবি মিহিরদের প্রতিবারের মতোই প্রথম থেকেই তার কবিতায় নিজের জাত চিনিয়েছেন। এই সংখ্যায় প্রকাশিত কবিতাতে যথেষ্ট মুন্সিয়ানা ছাপ আমরা দেখতে পাই। কবি লিখেছেন-
" ওরা কারা ?ওদের কি আমি চিনি ?
মুখের আদলগুলি চেনা মনে হয়? কিন্তু ছেলেবেলায় রূপকথার বইয়ে দেখা
সূর্যের রথের বলগাবিহীন।
সপ্তাশ্বের মত , ওদের ঐ দীপ্ত দীপ্র ভঙ্গী? ওরা কারা? ওদের কি আমি চিনি?"
মিনি পত্রিকায় প্রথম সংখ্যায় মিনি উপন্যাস লিখেছিলেন সত্য দত্ত।অমিতাভ করের লেখা 'নিরক্ত গোলাপ',শিশির কান্তি দেবের লেখা 'রেড লেড ', সুজয় রায়ের লেখা 'সংবাদ প্রকাশিত হবার আগে' গল্পগুলি পৌণমী র প্রথম সংখ্যার গৌরব বাড়িয়েছিল অনেকাংশেই। অমল কুমার মিত্রের 'মিনি উপদেশ' নামে মিনি লেখাটি ছিল মজাদার।
পৌণমী র মোট ১০ টি সংখ্যা মিনি পত্রিকা রূপে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে তা বড় কলেবরে প্রকাশিত হয়েছিল । যা বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাসে অনন্য নজির ও দক্ষতার ছাপ রেখেছে। "পৌণমী" -ত্রিপুরার প্রথম মিনি পত্রিকা নীরবেই পার করলো তার ৫০ বছর।
পৌণমী প্রকাশ বন্ধ হয়েছে , সে অনেক কাল আগেই। কিন্তু সত্যিকারের পাঠকের কাছে ও সাহিত্য পিপাসুদের কাছে পৌণমী আজও বেঁচে আছে।
(ছবিতে পৌণমী পত্রিকার প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ এবং পত্রিকার দুই সম্পাদক নীলিপ পোদ্দার ও রাতুল দেববর্মণ। দুই সম্পাদকের ছবি ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া।)
Comments
Post a Comment