*কলকাতার সমস্ত মেট্রো স্টেশনে বাংলা ভাষাকে দিতে হবে অগ্রাধিকার; মেট্রো রেল ভবনে দাবি জানাল 'ঐক্য বাংলা'*



নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা: গত কয়েক দিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি ভাইরাল হচ্ছিল। ছবিতে দেখা গিয়েছিল যে দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের একটি সাইনবোর্ডে 'দক্ষিণেশ্বর' শব্দটি বাংলা ভাষায় খুবই ছোট আকারে লেখা রয়েছে। অথচ সেই একই শব্দ হিন্দিতে খুবই বৃহৎ ও উজ্জ্বল আকারে লেখা রয়েছে। এরপরেই সামাজিক মাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠে, ক্ষোভ উগরে দেন বাঙালিরা। 

এবার সেই প্রতিবাদে সরব হল বাংলার প্রথম মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন 'ঐক্য বাংলা'। 


এই বিষয়ে 'ঐক্য বাংলা'র সাধারণ সম্পাদিকা শ্রীমতী সুলগ্না দাশগুপ্ত জানান , " বাংলার মাটিতে নির্মিত একটি মেট্রো স্টেশনের সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষা যে ছোট আকারে লেখা রয়েছে, অথচ হিন্দি বৃহৎ আকারে , উজ্জ্বল হরফে লেখা থাকছে এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। বাঙালিদের প্রতি এই ধরনের বৈষম্য একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। বাংলার বুকে বাঙালিদের নিজের মাতৃভাষায় সঠিক পরিষেবা পাওয়ার ন্যায্য দাবিতেই এ দিন মেট্রো রেল ভবনে স্মারকলিপি প্রদান করতে গিয়েছিলাম আমরা। " 



মেট্রো রেল ভবনে যাওয়ার আগে কি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল 'ঐক্য বাংলা' ? 


উত্তরে 'ঐক্য বাংলা'র অন্যতম নেতা অভিজিৎ গুহ নিয়োগী বলেন, "আমাদের সমর্থক দের কাছ থেকে ছবিটা পাওয়ার পর থেকেই আমরা আমাদের ফেসবুক পেজে যথাসম্ভব  প্রতিবাদ করি ও জনমত গঠন করি। আমরা টুইটারেও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে ট্যাগ করে এই বিষয়টা তুলে ধরি। 

এরপরে আমরা আমরা মেট্রোরেলের নির্দিষ্ট আধিকারিকদের দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশনের প্রসঙ্গটা তুলে ধরে চিঠি পাঠাই। সকলের সুবিধার্থে সেই চিঠির বয়ান আমাদের সামাজিক মাধ্যমে দিয়ে আমরা সমর্থকদের আহ্বান জানাই তারা যেন এই গণ ইমেইল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।"  


মেট্রো রেল ভবন কর্মসূচি প্রসঙ্গে 'ঐক্য বাংলা'র তরুণ সদস্য ঐক্যযোদ্ধা দেবায়ন সিংহ বলেন, " আমরা 'দক্ষিণেশ্বর' মেট্রো স্টেশনের সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষা যাতে সঠিক আকারে , উজ্জ্বল ভাবে লেখা থাকে সেই কারণে মেট্রোরেল ভবনে স্মারকলিপি প্রদান করতে গিয়েছিলাম। মেট্রোরেলের নির্দিষ্ট আধিকারিককে আমরা গিয়ে এই বিষয়টা তুলে ধরি। কিন্তু উনি সেই বিষয়টা কার্যতঃ স্বীকার করে নিয়ে আমাদের স্মারকলিপি জমা নেওয়ার পর সেই স্মারকলিপির 'রিসিভড কপি' দিতে অস্বীকার করেন। যদিও মৌখিকভাবে উনি আশ্বাস দেন উনি বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন ও সমস্যাটা উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। " 


তাহলে কি 'ঐক্য বাংলা'র প্রতিবাদ এখানেই থেমে যাবে ? 


'ঐক্য বাংলা'র সাধারণ সম্পাদিকা শ্রীমতী সুলগ্না দাশগুপ্ত জানান, " একেবারেই নয়‌। আমরা এই বিষয়টা নজরে রাখছি। পরে আবার যদি এইরকম সমস্যা দেখা যায় আমরা আবার মেট্রোরেল ভবনে যাব। উনারা কেন স্মারকলিপি জমা নেওয়ার পর আমাদের সেই 'রিসিভড কপি' দিলেন না সেটা উনাদের ব্যাপার। আর শুধুমাত্র দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশন নয়, একাধিক মেট্রো স্টেশনের সাইনবোর্ডে বা অন্য কোথাও সঠিক আকারে বাংলা না থাকার,বা বাংলা অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ উঠেছে। সুতরাং নিজের মাটিতে নিজের মাতৃভাষায় পরিষেবা পাওয়ার ন্যায্য দাবি থেকে আমরা সরব না।" 


'ঐক্য বাংলা'র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ঐক্যযোদ্ধা শ্রী সৌম্য চৌধুরীর কথায় উঠে আসে কেন্দ্রের হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী তথা বাংলা-বাঙালির প্রতি বঞ্চনার কথা। তিনি বলেন, " স্বাধীনতার পর থেকেই দল নির্বিশেষে কেন্দ্রীয় সরকার বাঙালির ওপর হিন্দি চাপাতে চেয়েছে।  'হিন্দি দিবস' , সকল কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির পরীক্ষা বাংলা ভাষায় না দিতে পারা, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষায় নিয়মাবলী ও নির্দেশাবলী অনুপস্থিত থাকে। সুতরাং এই সমস্যা নতুন কিছু নয়। এর পাশাপাশি স্বাধীনতার পর থেকে কেন্দ্র বাংলার প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করে এসেছে। একের পর কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার হেডকোয়ার্টার বাংলা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া, সাম্প্রতিককালে সংযুক্তিকরণের ফলে ইউনাইটেড ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার হেড অফিস কলকাতা থেকে সরে যাওয়া এবং কোল ইন্ডিয়ার হেড অফিস কলকাতা থেকে সরিয়ে রাঁচিতে নিয়ে যাওয়া - এই সব সিদ্ধান্তই কেন্দ্রের বাংলার প্রতি বিমাতৃসুলভ মনোভাব। তবে মেট্রো রেলের একাধিক স্টেশনে বিভিন্ন জায়গায় বাংলা ভাষা না থাকার অভিযোগ উঠেছে। 'দক্ষিণেশ্বর' মেট্রো স্টেশন বলে নয়, 'ঐক্য বাংলা' সকল মেট্রো স্টেশনে নজরদারি চালাবে। বাংলার মাটিতে বাংলা ভাষায় পরিষেবা পাওয়ার দাবি অত্যন্ত ন্যায্য ও সঙ্গতঃ । সুতরাং এই দাবি থেকে কোনোভাবেই আমরা সরে আসছি না।" 


এইদিনের কর্মসূচিতে উপস্থিত আরো দুজন সমর্থক সুমন দাস ও সুরজিৎ দাসও কার্যতঃ একই সুরে জানান যে  সার্বিকভাবে 'ঐক্য বাংলা' এই বিষয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। 



সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে স্মারকলিপির 'রিসিভড কপি' না পাওয়ার পরও 'ঐক্য বাংলা' ছিটেফোঁটাও হতাশ নয়।বরং তারা সার্বিকভাবে এই বিষয়ের ওপর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। এখন এটাই দেখার মাত্র নয় মাস বয়সী এই মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন তাদের আগেকার সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে মেট্রো রেলের সাইনবোর্ডে সঠিক ও উজ্জ্বল আকারে বাংলা নিয়মাবলী ও নির্দেশাবলী আনতে সক্ষম হয় কি না।

Comments

Popular posts from this blog

সমাজ সেবা করাই নেশা নীলকণ্ঠের

বঙ্গ গৌরব উৎসব সম্মান পেলেন মৌসুমী দাস

বেলঘরিয়া থানার পুলিশের উদ্যোগে উদ্বার বেআইনি একাধিক স্কুটি