মেট্রো রেলে সঠিক আকারে থাকতে হবে বাংলা ভাষা;কলকাতার বুকে বহুমুখী কর্মসূচি 'ঐক্য বাংলা'র

 


নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা : মাস খানেক আগে থেকেই সামাজিক মাধ্যমে কয়েকটি ছবি ঘুরছিল। সেখানে দেখা গিয়েছিল যে দক্ষিণেশ্বর ও বরাহনগর মেট্রো স্টেশনের বিভিন্ন সাইনবোর্ডে রয়েছে হিন্দির প্রাধান্য। বাংলা হরফ থাকলেও সেটা খুবই আবছা ও ক্ষুদ্র। এবার মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বরাহনগর ও দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন চত্বরে পোস্টারিং ও জনসংযোগ কর্মসূচি গ্ৰহণ করল 'ঐক্য বাংলা' ।


কেন এই কর্মসূচি গ্ৰহণ করা হল ? 


উত্তরে 'ঐক্য বাংলা'র সাধারণ সম্পাদিকা শ্রীমতী সুলগ্না দাশগুপ্ত জানান, " মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ তথা বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থার বিভিন্ন স্থানে বাংলা ভাষাকে ব্রাত্য করে রাখার বিষয়টি নতুন নয়। একই ঘটনা ঘটে দক্ষিণেশ্বর ও বরাহনগর মেট্রো স্টেশনেও। বাংলার মাটিতে যদি কোথাও বাংলা ভাষাকে সঠিকভাবে গুরুত্ব না দেওয়া হয় এবং সেই জায়গায় যদি হিন্দির প্রাধান্য চোখে পড়ে , তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই আপামর বাঙালিকে সচেতন করার জন্য এবং মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য আমরা বরাহনগর ও দক্ষিণেশ্বরে পোস্টারিং ও জনসংযোগ কর্মসূচি গ্ৰহণ করেছি। "


তবে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের বাংলার মাটিতে বাংলাকে ব্রাত্য করে রাখার বিরুদ্ধে এটাই ঐক্য বাংলার প্রথম কর্মসূচি নয়। 


'ঐক্য বাংলা'র অন্যতম নেতা অভিজিৎ গুহ নিয়োগী বলেন, " আমরাই প্রথম সংগঠন যারা সামাজিক মাধ্যমে দক্ষিণেশ্বরে বাংলা ভাষাকে অবহেলা করা হচ্ছে তার প্রতিবাদ জানাই। এরপরে আমরা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠাই, তারপরে সেই চিঠির বয়ান আমাদের সমর্থকদের জন্য পেজ থেকে দেওয়া হয়। আমরা সশরীরে মেট্রোরেল ভবনে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করি ও মেট্রো রেল আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলার পর আবার একবার মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট আধিকারিকদের চিঠি দিই। এবার পথে নেমে সাধারণ বাঙালিকে সচেতন করার জন্য এই কর্মসূচি গ্ৰহণ করা হল।" 


কি কি ভাবে তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে 'ঐক্য বাংলা' ? 


'ঐক্য বাংলা' সংগঠনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সৌম্য চৌধুরী জানালেন, " আমরা বরাহনগর ও দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন অঞ্চলে ঘুরে সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখি। যদিও আমাদের চোখে কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়েনি, স্থানীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এখনও সেই নির্দিষ্ট সাইনবোর্ড ঠিক করেনি। আমরা বিষয়টা নজরে রাখছি।" 


তিনি আরো জানান, " আমাদের মূল লক্ষ্যই ছিল মেট্রোরেলের বাংলা ভাষার প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণকে স্থানীয় বাঙালির কাছে পৌঁছে দেওয়া। সেই কারণে বরাহনগর ও দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন অঞ্চলে আমরা স্থানীয় বাঙালির সঙ্গে কথা বলে তাদের সচেতন করার চেষ্টা করি। একই সঙ্গে পোস্টারিং, লিফলেট বিলি ও জনসংযোগ কর্মসূচি পালন করে স্থানীয় বাঙালির কাছে এই বিষয়টা তুলে ধরি আমরা"


মেট্রোরেল এভাবে কেন হিন্দি চাপিয়ে দিচ্ছে? 


উত্তরে 'ঐক্য বাংলা'র দীর্ঘদিনের সদস্য ঐক্যযোদ্ধা কাওসার হক মন্ডল তাদের 'হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী' মনোভাবের বিষয়টি তুলে ধরেন। কাওসার বাবু জানান, " শুধু মেট্রোরেল বলেই নয়, কেন্দ্রীয় সরকার তথা তাদের বিভিন্ন সংস্থা চিরকাল হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দিতে চেয়েছে। এটা নতুন কিছু নয়। মেট্রোরেলের সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষাকে ব্রাত্য রাখা তথা উপযুক্ত মর্যাদা না দেওয়া তাদের হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতারই  বহিঃপ্রকাশ। হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে 'ঐক্য বাংলা'র লড়াই চলবে।"


এই দিনের কর্মসূচিতে উপস্থিত 'ঐক্য বাংলা'র অপর এক সদস্য ঐক্যযোদ্ধা লিটন দেবনাথ ও প্রায় একই সুরে বলেন, " দিনের পর দিন আমরা নিজেদের মাটিতে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হচ্ছি। বহিরাগতদের দাপট ক্রমেই বাড়ছে।ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই বাংলা ভাষাকে ব্রাত্য করা হচ্ছে। সুতরাং 'ঐক্য বাংলা'র এই লড়াই বাঙালির জন্য, বাংলার ভূমি সন্তানদের জন্য। এই লড়াই থেকে আমরা কোনোভাবেই পিছু হটব না।" 


তবে অন্য একটি বাংলা জাতীয়তাবাদী সংগঠনকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি 'ঐক্য বাংলা'র তরুণ সদস্য দেবায়ন সিংহ। তিনি বললেন, " আমরা প্রথম থেকেই এই বিষয়ে সরব হয়ে উপযুক্ত জায়গায় চিঠি দেওয়া থেকে শুরু করে স্মারকলিপি প্রদান সবই করেছি। এই দিন পথে নেমে সচেতনতামূলক কর্মসূচিও গ্ৰহণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র প্রচারের জন্য চিৎকার - চেঁচামেচি করে লোক দেখানো মেকি প্রতিবাদে আমরা বিশ্বাসী নই।'ঐক্য বাংলা' অধিকার আদায় করতে জানে।শুধুমাত্র একটা নামী দৈনিক বাংলা সংবাদপত্র বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে বলেই সেই 'বাংলাবাদী' সংগঠনের হয়তো ঘুম ভেঙেছে, তবে 'ঐক্য বাংলা' সেই দলে পড়ে না। অর্থাৎ যেভাবে একের পর এক বিভিন্ন বিষয়ে অভিনব ও কার্যকরী কর্মসূচি গ্ৰহণের মাধ্যমে সাফল্য লাভ করছে বাংলার প্রথম মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এখন দেখার ভবিষ্যতে তারা তাদের এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয় কি না।

Comments

Popular posts from this blog

সমাজ সেবা করাই নেশা নীলকণ্ঠের

বঙ্গ গৌরব উৎসব সম্মান পেলেন মৌসুমী দাস

উত্তরপাড়ায় চলছে জমজমাট হস্তশিল্প প্রদর্শনী