*বিজেপি সাংসদের জাতীয় সংগীত বিরোধিতা: প্রতিবাদ সভার আয়োজন করল ঐক্য বাংলা*



নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা : বিজেপি সাংসদ ও প্রবীণ নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী যে কবিগুরুর লেখা জাতীয় সঙ্গীত বদলাতে চেয়েছেন সে কথা সকলেরই জানা। এই বিষয়টি শোনার পর থেকেই নিন্দায় সরব আপামর বাঙালি সমাজ। 


সেই নিন্দায় সামিল বাংলার প্রথম মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন 'ঐক্য বাংলা'ও।

বিজেপি সাংসদ সুব্রাহ্মণ্যম স্বামীর এই আবেদনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রবিবার অর্থাৎ ২০শে ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার মোহর কুঞ্জের সামনে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করল 'ঐক্য বাংলা'। 


তবে প্রতিবাদ সভার আগেও কি কোনো কর্মসূচি গ্ৰহণ করেছিল 'ঐক্য বাংলা' ? 


উত্তরে 'ঐক্য বাংলা'র সাধারণ সম্পাদিকা শ্রীমতী সুলগ্না দাশগুপ্ত জানান , " বিষয়টা জানার পর থেকেই আমরা সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে এক সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি 'জাতীয় সঙ্গীত সপ্তাহ'-এর আয়োজন করেছিলাম। আমাদের একটাই দাবি ছিল - কোনোভাবেই কবিগুরুর লেখা জাতীয় সঙ্গীত বদল করা যাবে না। আমরা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে এই বিষয়ে চিঠি লিখে আবেদন জানাই তাঁরা যেন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন ও কবিগুরু রচিত 'জন গণ মন'ই যেন ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে থাকে।" 



সুলগ্না দেবী আরো জানালেন, " এর পাশাপাশি আমাদের সংগঠনের সদস্যরা রাস্তায় নেমে সাধারণ বাঙালির প্রতিক্রিয়া নিয়ে এই বিষয়ে জনমত গঠন করার চেষ্টা করেন। আমরা বিভিন্ন জায়গায় লিফলেট বিলি ও পোস্টারিং কর্মসূচির মাধ্যমে জনসংযোগ কর্মসূচির মাধ্যমে বাঙালিকে সচেতন করার চেষ্টা করি। সুতরাং আমরা প্রথম দিন থেকেই এই ইস্যুতে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করছি।" 


তাহলে এই দিন পথসভা ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হল কেন ? 


এই প্রশ্নের উত্তরে 'ঐক্য বাংলা'র অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা অভিজিৎ গুহ নিয়োগী বলেন, " আমরা গত এক সপ্তাহ ধরেই সামাজিক মাধ্যমে ও পথে নেমে কর্মসূচি গ্ৰহণ করে চলেছি যেটা আমাদের 'জাতীয় সঙ্গীত সপ্তাহ'-এর অন্তর্গত ছিল। কিন্তু তার পরেও আমাদের মনে হচ্ছিল শুধু সেইটুকুই যথেষ্ট নয়, পথে নেমে জমায়েত ও প্রতিবাদ প্রয়োজন।সেই কারণেই এই পথসভা ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে আমাদের 'জাতীয় সঙ্গীত সপ্তাহ' কর্মসূচিও শেষ হল।" 


কেন বিজেপি সাংসদ সুব্রাহ্মণ্যম স্বামী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'জন গণ মন' বদলাতে চেয়ে অন্য জাতীয় সঙ্গীত রাখার জন্য আবেদন জানিয়েছেন ? 


ঐক্য বাংলা সংগঠনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সৌম্য চৌধুরী বললেন , " বিজেপি তথা আরএসএস পরিবারের রবীন্দ্রনাথ বিদ্বেষ বহু পুরোনো। এরা রবীন্দ্রনাথের আদর্শকে ভয় পায়। তাই তাঁর লেখা জাতীয় সঙ্গীত বদলে, তাঁর লেখাকে পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করছেন। সুতরাং তাঁরা যে রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সঙ্গীত বদলাতে চাইবেন এটা তো খুবই স্বাভাবিক"। 


এদিনের পথসভায় উপস্থিত 'ঐক্য বাংলা'র পুরোনো ও সিনিয়র সদস্য শৈবাল বসু জানালেন, " আসলে পুরো বিষয়টাই রাজনৈতিক। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাঙালির গতি প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা চলছে।" 


সংগঠনের আর এক তরুণ সদস্য ঐক্যযোদ্ধা সৌম্যজিৎ দাস-ও কার্যতঃ একই সুরে বললেন, " এরা বাংলা ভাষাকে মুছে ফেলে , বাঙালিকে অস্তিত্বহীন করতে তৎপর‌। তাই বাঙালির অন্যতম প্রাণপুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখার ওপর আঘাত হানার চেষ্টা চলছে।" 


তবে 'ঐক্য বাংলা'র অপর আরেকজন তরুণ সদস্য দেবায়ন সিংহ সরাসরি বিজেপিকে বহিরাগত আখ্যা দিচ্ছেন। তিনি জানালেন, " একটা সাম্প্রদায়িক , মনুবাদী, গোবলয়ের দলের সঙ্গে বাংলার, বাঙালির সংস্কৃতির কোনো মিল নেই। তাদের আসল লক্ষ্য হচ্ছে যেন তেন প্রকারে বাংলা দখল। কিন্তু একটি অবাঙালী নিয়ন্ত্রিত বহিরাগত সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সচেতন বাঙালি লড়বে,এক ইঞ্চি জায়গাও ছেড়ে দেওয়া হবে না।" অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে এই বিষয়ে অনেকে প্রতিবাদ জানালেও এইভাবে সুপরিকল্পিতভাবে কর্মসূচি গ্ৰহণ ও রূপায়ন অন্য কোনো সংগঠন করতে পারেনি। সুতরাং যেভাবে বাংলার প্রথম মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন তাদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে লড়াকু মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছে, সেটার তারিফ করতেই হচ্ছে। 

এখন দেখার 'ঐক্য বাংলা'র চাপের মুখে তথা আপামর বাঙালির প্রতিবাদে বিজেপি সাংসদ ক্ষমা চান কি না।

Comments

Popular posts from this blog

সমাজ সেবা করাই নেশা নীলকণ্ঠের

বঙ্গ গৌরব উৎসব সম্মান পেলেন মৌসুমী দাস

বেলঘরিয়া থানার পুলিশের উদ্যোগে উদ্বার বেআইনি একাধিক স্কুটি