সমালোচনায় বীরচন্দ্র সাধারণ গ্রন্থাকারের উদ্যোগে কবিগুরুর “বিসর্জন”(১৯৬০)

 



বানীব্রত দত্ত ,বিশেষ প্রতিবেদন: বীরচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরীর উদ্যোগে ১৯৬০ সালের জুলাই মাসে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'বিসর্জন ' নাটক মঞ্চস্থ হয় । উমাকান্ত একাডেমির ক্যাম্পাস হলে। নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার পর সে সময় বিভিন্ন পত্রিকায় আলোচনা সমালোচনা প্রকাশ পায়। নাটকের অভিনয় নিয়ে সাপ্তাহিক 'সমাচার' পত্রিকায় তীব্র সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ পায় ২৪ জুলাই,১৯৬০ সালে। পরবর্তীতে এই নাটকটি বিভিন্ন মঞ্চে মঞ্চস্থ হয়েছিল। ১৯৬১ সালের জুলাই মাসেই আগরতলার প্রগতি বিদ্যামন্দিরের জ্ঞান মন্দিরে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল। প্রথম বার এই নাটকের অভিনয়ে যারা ছিলেন তাদের অনেকেই পরবর্তী উপস্থাপনায় ছিলেন না। তবুও নাটকটি নিজের মেজাজেই দ্বিতীয়বার দর্শকদের মন জয় করতে পেরেছিল। কিন্তু প্রথমবার 'বিসর্জন' (১৯৬০) নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার পর সমাচার পত্রিকার প্রতিবেদনে কি লেখা হয়েছিল, তা উপস্থাপন করা হয় এখানে।



"আসন্ন রবীন্দ্র শতবার্ষিকী উৎসবের প্রারম্ভিক অনুষ্ঠান হিসেবে স্থানীয় বীরচন্দ্র সাধারণ পাঠাগারের কর্মীবৃন্দ গত ১৩ই ও ১৪ই জুলাই সন্ধ্যায় একাডেমির ক্যাম্পাস হলে কবিগুরুর বিসর্জন নাটকখানা মঞ্চস্থ করেছেন। ত্রিপুরা রাজবংশের ঐতিহাসিক কাহিনী সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে জড়িত কবিগুরুর' বিসর্জন' নাট্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শতবার্ষিকী উৎসবের মাঙ্গলিক উদ্বোধন করে গ্রন্থাকারের কর্মীবৃন্দ প্রসংশনিয় রুচি এবং পবিত্র নৈতিক দায়িত্ববোধের এই পরিচয় দিয়েছেন।


' বিসর্জন 'নাটকে সর্বাংশে সার্থক অভিনয় দুরূহ ব্যাপার সন্দেহ নেই এবং এক্ষেত্রেও বিভিন্ন প্রতিকূলতার জন্য নাটক খানা সর্বাঙ্গ সুন্দর হয়ে উঠতে পারিনি । বিসর্জনের মূল নাট্যপ্রবাহ রঘুপতি এবং জয় সিংয়ের উপরে বিশেষভাবে নির্ভরশীল। রঘুপতির ভূমিকাভিনেতা শ্রী বিমল গুপ্ত তার চরিত্রটির জন্য যথেষ্ট খেঁটেছেন এবং এখানে তার নিষ্ঠার পরিচয়। কিন্তু তার অভিনয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিচিত্র চরিত্র প্রকাশের সুসমঞ্জস্য সম্মেলন ঘটেনি এবং সেই জন্যই বিসর্জন নাটকের অন্যতম প্রাণপুরুষ তান্ত্রিক সাধক রঘুপতি আশা, আকাঙ্ক্ষা, উদ্বেগ, ক্রোধ এবং জীবন যন্ত্রণার ক্লান্ত মুহূর্তগুলোতে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হতে পারিনি। তার অভিনয়ে কয়েকটা বিশেষ জায়গায় বিলম্বিত অভিব্যক্তির বড় প্রয়োজন ছিল। অপর্ণার ভূমিকায় কুমারী সুমিত্রা দত্তও দর্শকদের নিরাশ করেছেন। বিশেষ করে তার অভিনয়ে একটা মৃদু অথচ অস্বাভাবিক আড়ষ্টতা জড়িয়ে থাকার অপর্না দর্শকদের হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি। অতিরিক্ত আবেগ আরোপের সুযোগ ছিল ।অপর্ণা দর্শকদের হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি। সবদিক থেকে সুন্দর অভিনয়ের জন্য গোবিন্দ মানিক্যের ভূমিকায় চন্দ্রশেখর চক্রবর্তী অবশ্যই ধন্যবাদ পাবেন। তার সংলাপ পরিবেশনের ভঙ্গি এবং দীর্ঘায়িত অভিব্যক্তি বড় সুন্দর হয়েছে । পার্শ্ব চরিত্র নয়ন রায়ের ভূমিকা সু অভিনীত । সংলাপ পরিবেশনের কুশলতা এবং অঙ্গভঙ্গি ও ভাষা প্রকাশের সংযম থাকলে গুনবতীর চরিত্রটি সুন্দর হতে পারত । সং ক্লাবের সঙ্গে ভাবগত যোগাযোগের অভাব একাধিক চরিত্রেই চোখে পড়েছে। নক্ষত্র মানিক্যের ভূমিকায় শ্রী ফণী চক্রবর্তী চরিত্রের বাস্তব মান বজায় রাখতে পারেননি। কোন কোন সময় রহস্যময় ভাব প্রকাশ ভাড়ামিতে পর্যবাসিত হয়েছে। কৃতি পরিচালক সুধাংশু দত্তের কাছে আমাদের আরো প্রত্যাশা ছিল । গ্রন্থাগারের কর্মীরা অভিনয়ের সকল অংশকে নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে যদি কিছুটা বাইরের সহযোগিতা নিতেন তাহলে বোধহয় নাটক খানা সর্বাঙ্গ সুন্দর হয়ে উঠতো। আলোকস সম্পাত এবং যন্ত্রসংগীত নিয়ন্ত্রণের কাজ ভালো। তবে রূপসজ্জা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসুন্দর হয়ে হয়েছে। পারিপার্শ্বিক ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য কণ্ঠসঙ্গীত হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠতে পারেনি ।


'বিসর্জনে'র নাট্য প্রয়াসকে দুঃসাহসিক বলে সরিয়ে না রেখে ত্রিপুরার সংস্কৃতিপরায়ন মানুষের পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে বীরচন্দ্র সাধারণ গ্রন্থাগারের কর্মীরা এই প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করে প্রভূত প্রশংসার অধিকারী হয়েছেন। রবীন্দ্র শতবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হিসেবে তাদের এই নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার কাছে আলোচ্য বিবিধ অপূর্ণতা সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয় ।"

Comments

Popular posts from this blog

বঙ্গ গৌরব উৎসব সম্মান পেলেন মৌসুমী দাস

বেলঘরিয়া থানার পুলিশের উদ্যোগে উদ্বার বেআইনি একাধিক স্কুটি

সমাজ সেবা করাই নেশা নীলকণ্ঠের