আন্তর্জাতিক শিশু দিবস

 

 সন্দীপ চক্রবর্তী, বিশেষ প্রতিবেদনঃ 

কবির ভাষায়........

ছোটবেলায় পড়া কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা

 ' আগামী ' কবিতার দুটি লাইন দিয়ে আজ শুরু করলাম.......// " ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই - জানি ভাবী বনস্পতি,// বৃষ্টির, মাটির রসে পাই আমি তার তো সম্মতি"।। 


শিশু দিবস হলো শিশুদের একটি বিশেষ দিন যেখানে শিশুদের নিয়ে দিনটি বা দিবসটি উদযাপিত হয়ে থাকে । শিশু দিবস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন   দিনে বা সময়ে পালন করে থাকে। প্রথমবার তুরস্কে ১৯২০ সালের ২৩ শে এপ্রিল পালিত হয়েছিলো শিশু দিবস । ১৯৫৬ সাল থেকে বিশ্ব শিশু দিবস ২০ শে নভেম্বর উদযাপিত হয়ে থাকে। ১৯৬৯ সালের ১ লা জুন আন্তর্জাতিক শিশু দিবস উদযাপন করা হয় সারা বিশ্বে।তবে বিভিন্ন দেশে নিজস্ব নির্দিষ্ট দিনে  সেই দেশের শিশু দিবস উদযাপন করে থাকে।


আজ ১ লা জুন আন্তর্জাতিক শিশু দিবস সমস্ত দেশ পালন করলেও প্রতিটি দেশ তাঁর নিজের দেশের একটি দিন শিশু দিবস সাড়ম্বরে পালন করে থাকে।প্রায়  ৪৭ টি দেশ অন্তর্জাতিক শিশু দিবসের দিনটিতেই তদের দেশেরও শিশু দিবস হিসাবে পালন করে থাকে ।


বেশকিছু দেশের শিশু দিবসের একটি তালিকা ---


জানুয়ারীর প্রথম শুক্রবার - বাহামা দ্বীপপুঞ্জ।

১১ ই জানুয়ারী - তিউনিসিয়া ।

জানুয়ারীর দ্বিতীয় শনিবার - থাইল্যান্ড। 


ফেব্রুয়ারির  দ্বিতীয় রবিবার - কুক দ্বীপপুঞ্জ, নাউরু , নিউই, টোকেলাউ, কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ।


মার্চের প্রথম রবিবার - নিউজিল্যান্ড।

চৈত্র ৩ ( মার্চ ১৭ ) - বাংলাদেশ ।


৪ ই এপ্রিল - হংকং, তাইওয়ান ।

৫ ই এপ্রিল - ফিলিস্তিনী অঞ্চলসমূহ।

১২ ই এপ্রিল - বলিভিয়া, হাইতি।

এপ্রিলের শেষ শনিবার - কলম্বিয়া ।

২৩ শে এপ্রিল - তুরস্ক ।

২৪ শে এপ্রিল - জাম্বিয়া ।

৩০ শে এপ্রিল - মেক্সিকো।

৫ ই  মে  - জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ।

মের দ্বিতীয় রবিবার - স্পেন ।

১০ ই মে - মালদ্বীপ।

১৭ ই মে - নরওয়ে ।

২৭ শে মে - নাইজেরিয়া ।

মের শেষ রবিবার - হাঙ্গেরি ।


আসেনশন  উৎসব -আমেরিকান সামােয়া, ফক্‌ল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ, সলােমন দ্বীপপুঞ্জ।


১ লা জুন - আলবেনিয়া, গণচীন, গিনি বিসাউ , মলদোভা, পর্তুগাল, তাজিকিস্তান, আর্মেনিয়া, কম্বােডিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, কাজাখস্তান, মঙ্গোলিয়া, রােমানিয়া, তানজানিয়া, আজারবাইজান, কসােভাে,  রাশিয়া, বেলারুশ, পূর্ব তিমুর, মন্টিনিগ্রো, সাঁউ তুমি ও  প্রিন্সিপি, তুর্কমেনিস্তান, বেনিন, কিরগিজিস্তান,  ইউক্রেন, বুলগেরিয়া, লাওস, মােজাম্বিক, বসনিয়া ও হার্জেগােভিনা, ইকুয়েডর, লাতভিয়া, সার্বিয়া, উজবেকিস্তান,  লেবানন, মায়ানমার, ইস্তোনিয়া, স্লোভাকিয়া, ভিয়েতনাম, লিথুয়ানিয়া, নিকারাগুয়া, ইয়েমেন, স্লোভেনিয়া,  ইথিওপিয়া, জর্জিয়া (রাষ্ট্র), ম্যাসেডােনিয়া প্রজাতন্ত্র,  পােল্যান্ড, মাকাও ।

২ রা জুন - উত্তর কোরিয়া। 

জুনের দ্বিতীয় রবিবার - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ।

১ লা  জুলাই - পাকিস্তান ।

জুলাইয়ের  তৃতীয় রবিবার - কিউবা, পানামা, ভেনেজুয়েলা।

২৩ শে জুলাই - ইন্দোনেশিয়া ।

২৪ শে জুলাই  - ভানুয়াটু ।


আগস্টের প্রথম রবিবার - উরুগুয়ে ।

আগস্টের দ্বিতীয় রবিবার - আর্জেন্টিনা।

১৬ ই আগস্ট - প্যারাগুয়ে ।

আগস্টের তৃতীয় রবিবার - পেরু ।


৯ ই সেপ্টেম্বর - কোস্টা রিকা।

১০ ই সেপ্টেম্বর - হন্ডুরাস।

১৪ ই সেপ্টেম্বর -  নেপাল ।  

২০ শে সেপ্টেম্বর - জার্মানি।


১ লা অক্টোবর - এল সালভাদোর, গুয়াতেমালা, শ্রীলঙ্কা।

অক্টোবরের প্রথম শুক্রবার - সিঙ্গাপুর ।

অক্টোবরের প্রথম বুধবার ( স্বীকৃতি এবং সাক্ষাৎ ) আগস্টের দ্বিতীয় রবিবার ( উদ্যাপন )- চিলি।

৮ ই অক্টোবর - ৮ ইরান ।

১২ ই অক্টোবর - ব্রাজিল ।

অক্টোবরের ৪ র্থ শনিবার - অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া।

নভেম্বরের প্রথম শনিবার - দক্ষিণ আফ্রিকা।

১১ ই নভেম্বর - ক্রোয়েশিয়া ।

১৪ ই নভেম্বর - ভারত ।

২০ শা নভেম্বর - আরব বিশ্ব, আজারবাইজান, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, মিশর, ইথিওপিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, গ্রিস,  প্রজাতন্ত্রী আয়ারল্যান্ড, ইসরায়েল,  কেনিয়া, মালয়েশিয়া,  ম্যাসেডােনিয়া প্রজাতন্ত্র, নেদারল্যান্ডস, ফিলিপাইন,  রাশিয়া,  সার্বিয়া,  স্লোভেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা,  স্পেন, সুইডেন,  সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ত্রিনিদাদ ও টোবাগাে।


৫ ই ডিসেম্বর - সুরিনাম।

২৩ শে ডিসেম্বর - দক্ষিণ সুদান, সুদান ।

২৫ শে ডিসেম্বর কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ক্যামেরুন।

ডিসেম্বরের শেষ শুক্রবার - ডোমিনিকা ।


ভারতে শিশু দিবস উদযাপন ১৯৫৬ সালর ২০ শে নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছিল । জওহরলাল নেহেরুই ভারতে ২০ শে  নভেম্বর শিশু দিবস উদযাপন শুরু করেছিলেন জাতিসংঘ কর্তৃক সর্বজনীন শিশু দিবসের দিনটিতে।

স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু শিশুদের কাছে ছিলেন প্রিয় "চাচা নেহেরু" নামে । অন্যদিকে জওহরলাল নেহরুও ছোটদের সঙ্গে সময় কাটাতে খুব ভালোবাসতেন।

তিনি বখেছিলেন----

"শিশুরা বাগানের কুঁড়ির মতাে । খুব যত্ন সহকারে ওদের দেখভাল করতে হয় । ওরা দেশের ভবিষ্যৎ , আগামিকালের নাগরিক । একমাত্র সঠিক শিক্ষাই পারে একটা সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে ।"


পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু আরো বলেছিলেন ---

"বড়দের জন্য অমার কাছে সময় নাও থাকতে পারে। কিন্তু ছােটদের জন্য অমার অনেক সময় আছে ।"


রাষ্ট্রসংঘ ১৯৫৬ সালের ২০শে  নভেম্বর দিনটিকে শিশু দিবস হিসাবে পালনের জন্যে ঘোষণা করেছিল। সেই ঘোষণা অনুযায়ী ভারতেও ২০ শে নভেম্বর শিশু দিবস হিসাবে পালন করা হত।তবে ১৯৬৪ সালের ২৭ মে,পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর প্রয়াণের পর শিশুদের প্রতি তাঁর চরিত্রের এই বিশেষ দিকটিকে স্মরণে রেখে সর্বসম্মতভাবে তাঁর জন্মদিনটি ভারতে শিশু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারপর থেকেই প্রতিবছর ১৪ নভেম্বর দিনটি শিশু দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।

শিশুদের অধিকার, যত্ন এবং শিক্ষার সচেতনতা বাড়াতে সারা ভারত জুড়ে শিশু দিবস পালিত হয় প্রতি বছরের ১৪ নভেম্বর ।ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর জন্মদিনটিকেও  শ্রদ্ধার সাথে  উদযাপিত করা হয়। নেহেরু শিশুদের পড়াশোনা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন যাতে তারা  ভবিষ্যতে আরও উন্নত সমাজ গড়ে তুলতে পারে। নেহেরু শিশুদেরকে একটি জাতির আসল শক্তি এবং সমাজের ভিত্তি হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন।এই দিনটি, শিশুদের জন্য সারা ভারত জুড়ে অনেক শিক্ষামূলক এবং অনুপ্রেরণামূলক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে ।


জওহরলাল নেহেরুর ভারতের শিশুদের প্রতি অগাধ আশা ও আস্থা ছিল কারণ তারা "পার্থক্যের কথা চিন্তা করে একসাথে খেলতে পারবেন"। তিনি ১৯৫৫ সালে চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটি ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যাতে ভারতীয় শিশুরা তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে তিনি ভারতে কয়েকটি বিশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়ে থাকেন। তার দৃষ্টিভঙ্গিই একটু আলাদা ছিলো তাই চিকিৎসার জন্য এইমস, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্যে আইআইটি এবং পরিচালন গবেষণার জন্য আইআইএম স্থাপনের দিকে নজর দিয়েছিলেন।  নেহেরুর উত্তরাধিকার ভারতের শিশুদের শিক্ষিত করে চলেছে।  তিনি বলেছিলেন যে, -


"আজকের শিশুরা আগামীকালকে ভারত বানাবে।"

আমরা যেভাবে তাদের সামনে এনেছি তা দেশের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে।"ইন্দিরা গান্ধীর কাছে লেখা তাঁর চিঠিগুলিতে এই দর্শন প্রকাশ করা হয়েছে  , তার মেয়ে, যখন সে একটি অল্প বয়সী মেয়ে ছিল। চিঠিগুলিও বই হিসাবে প্রকাশিত হয়েছিল। বাবার কাছ থেকে তাঁর কন্যার ১৯২৯ এবং বিশ্ব ইতিহাসের গ্লিম্পেসের চিঠি ১৯৩৪ শিশুদের অ-কল্পকাহিনী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে কারণ দীপা আগরওয়াল লিখেছেন যে,

"যে কোনও শিশু তাদের উষ্ণ, স্নেহময় সুর এবং তার আকর্ষণীয় এবং স্বতঃস্ফূর্ত স্টাইলে সাড়া দিতে পারে  তাদের মধ্যে বোনা তথ্যের ধন এবং ঐতিহাসিক তথ্যগুলির কাছে তার অনন্য পদ্ধতির যোগ করা একটি বোনাস ...মানবতাবাদী মূল্যবোধের যোগাযোগ" ।

বাচ্চাদের এই দিনটিতে মজাদার ক্রিয়াকলাপ রয়েছে, সকাল প্রভাত ফেরি থেকে শুরু করে,সমাবেশ থেকে শুরু করে নৃত্য, সংগীত প্রভিতির মধ্যদিয়ে পালন করা হয়ে থাকে । শিশুরা এই দিনের ও সময়ের  আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু।


আবারো কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা

'ছাড়পত্র ' কবিতার চারটি লাইন দিয়ে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমার উপলব্ধি ব্যক্ত করলাম ও ভাবি মানব সম্পদ রক্ষা করবার জন্যে সকলের সাহায্য, সহযোগিতা আশা করলাম ...


" চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ

প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,

এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি

নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার। "




Comments

Popular posts from this blog

বঙ্গ গৌরব উৎসব সম্মান পেলেন মৌসুমী দাস

বেলঘরিয়া থানার পুলিশের উদ্যোগে উদ্বার বেআইনি একাধিক স্কুটি

সমাজ সেবা করাই নেশা নীলকণ্ঠের