।। উত্তম কুমারের মরদেহ কি তৎকালীন বাম সরকার রবীন্দ্র সদনে রাখতে দেয়নি? ।।
লেখক- চন্ডী লাহিড়ী (প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট)
সাঁইবাড়ির রক্তমাখা ভাত, মরিচঝাঁপির পর সুন্দরবনের বাঘেরা মানুষ খেকো হয়ে ওঠে'র মত দক্ষিণপন্থীদের ছড়ানো আরেকটি মিথ্যাচার। সত্যিটা হল উত্তমকুমারের পরিবারের অনুরোধেই শবদেহ রাখা হয়নি রবীন্দ্র সদনে।
প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট চন্ডী লাহিড়ী আসল সত্যটা লিখেছিলেন "এইসময়" পত্রিকায়। সেটাই তুলে ধরা হল ......
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শবদেহ ১৯৪১ সালে নিমতলা শ্মশানঘাটে নামানো হয় তখন ভক্তবৃন্দের অতি উৎসাহে কবির দাঁড়ির চুল উৎপাটিত হয়েছিল। প্রতিমাদেবী সে দৃশ্য দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন। নির্মলকুমারী মহলানবীশ আমৃত্যু সেই কুদৃশ্য ভুলতে পারেননি। অনেকে এখনও অভিযোগ করেন যে উত্তমকুমার মারা যাওয়ার পর তাঁর শবদেহ রবীন্দ্র সদনে নামানো হয়নি।
উত্তমকুমারের সময়ে কলকাতার লোকসংখ্যা বা উত্তমের ভক্তসংখ্যা বেড়েছিল বহুগুণ। যদি সত্যিই সেদিন রবীন্দ্র সদনে নামানো হত মাথার চুল নয়, গায়ের মাংস পর্যন্ত ভক্তরা ছিঁড়ে নিয়ে বাড়ি যেত। পুলিশ আমাদের ফোন করে। আমরা সাংবাদিকরাই বারণ করেছিলাম। দুলেন্দ্র ভৌমিক ও আমি এক কোণে বসে দুটো উত্তমভক্ত বদ্ধ পাগলকে সামলাচ্ছিলাম। একটা পাগল তো প্রতিজ্ঞাই করেছিল উত্তমকুমারের চিতায় সহমরণে যাবে।
গৌরকিশোর ঘোষ সেসময় রিপোর্টাস ডেস্ক সামলাচ্ছেন। গৌরদার কাছে শুনলাম, পুলিশ উত্তমের শবদেহ রবীন্দ্র সদনে নামাতে সাহায্য করছে না। স্বয়ং বুড়োদা বারণ করেছেন। বুড়োদা (উত্তমকুমারের ভাই তরুণকুমার) ভরসা দেওয়ায় পুলিশ শবদেহ না নামানোর সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেলেছে। এ ব্যাপারে গৌরদার বড় ভূমিকা ছিল। আজকের ইন্টারনেট হাজারবার ঘাটলেও বুড়োদার চোখের জল ধরা পড়বে না। তাঁর তো সহোদর দাদা। যতই মানুষ বিখ্যাত মানুষ হন না তিনি, শবদেহের উপর স্ত্রী ও সহোদর ভাইয়ের অধিকার বেশি। পুলিশ তাঁদের নির্দেশ মেনেছিল সেদিন। সত্যের খাতিরে অপ্রিয় সত্যিটা লিখছি নতুন প্রজন্মের জন্য।
Comments
Post a Comment