প্রতিজ্ঞাবদ্ধতায় মানবিক সেবার দায়ভার পালন পেটালসের

 


ডঃ বিদিশা বারিক, কলকাতাঃ শুধু এক দিন বা এক মাসের নয়, PETALS আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সমস্ত ওষুধ পত্রের সাথে তাদের নিয়মিত ভাবে চেকআপ করিয়ে শারীরিক দেখভালের দায়িত্ব নেবে। এক ই সঙ্গে গরীব, দুঃস্থ মানুষদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে সারা মাসের রেশন।

 

পূজার স্পেশাল রেশন, বস্ত্র হল, স্বাস্থ্যও হল আর পেটের খিদে? ওটাই তো কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন সব যোগান দেয়। সেটাই যদি না থাকে তাহলে কোথায় শুনবেন সেই আওয়াজ, প্রতিধ্বনী, চিৎকার, প্রতিবাদ? সব তো বন্ধ হয়ে যাবে তাই গলার আওয়াজ বের করতে গেলে পেটে খাবার দিতে হবে। সেই কথাকেই মাথায় রেখে PETALS আয়োজন করে পূজোর স্পেশাল রেশনেরঃ

 লকডাউন শুরুর পর থেকে পাইকপাড়া অঞ্চলে পিছিয়ে পড়া প্রায় 7 টি পরিবারে পূজোর রেশন পৌঁছে দেওয়া হয় । ঐ পরিবারের মধ্যে একজন ছিলেন বৃদ্ধা ও অসুস্থ মা যিনি কর্মক্ষমতা হারিয়ে আজ বিছানায় শয্যাশায়ী। তাই মন্দিরে তাকে খুশি করতে গেলে আর এক মাকে বাঁচাতে হবে, তাঁর পাশে থাকতে হবে। এই অঙ্গীকার নিয়েই PETALS পৌঁছে গিয়েছিল তাঁর কাছে। ক্যানিং, বর্ধমান, বড়কাছারীতে যে সকল দৃষ্টিহীন ভাইবোনদের কাছে PETALS পৌঁছতে পারেনি তাদের সকলের কাছে রেশনের সমান মূল্য অর্থ পাঠানো হলো। প্রায় 9 টি পরিবারে পাঠানো হয় এই অর্থ। মায়ের পূজোর ভোগ হোক সবার ঘরে।  বরানগর, শ্যামনগর ও টিটাগড়ে প্রায় 17 টি পিছিয়ে পড়া পরিবারে পূজোর রেশন পৌঁছে দিল PETALS ।

সৌমেন ও জয়শ্রী অত্যন্ত মেধাবী দুই ছাত্রছাত্রী যাদের পড়াশোনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব PETALS অনেক আগেই নিয়েছে । তাদেরই পরিবারে পূজোর এক মাসের রেশন ও নতুন বস্ত্র পৌঁছে দেওয়া হল। অন্যদিকে হাওড়াতে সুলগ্না ভর পৌঁছে গেছেন বিভিন্ন মানুষের কাছে পূজোর রেশন নিয়ে।



PETALS কল্যাণী,জগদ্দল, নৈহাটিতে প্রায় 37 জন দৃষ্টিহীন ও শারীরিকভাবে অক্ষম ভাই বোনদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পূজোর স্পেশাল রেশন পৌঁছে দেয়। দত্তপুকুর , বারাসাত ,মধ্যমগ্রাম এ প্রায় 31 জন দৃষ্টিহীন ও শারীরিকভাবে অক্ষম ভাই বোনদের বাড়ি পূজোর স্পেশাল রেশন পৌঁছে দিল PETALS। PETALS র কাজ চলেছে সল্টলেক, উল্টোডাঙ্গা এলাকায়। দৃষ্টিহীন কিছু বাচ্চাদের তাদের বাড়িতে সরাসরি পূজোর জন্যে রেশন পৌঁছে দেওয়া হয়। PETALS এর সাথে থেকে নিজের হাতে কাজ তুলে নিয়েছিলেন প্রিয় লেখিকা ও শিক্ষিকা শ্রীমতি মহাশ্বেতা মুখার্জি।

PETALS গেছিল হাবড়া ও সংলগ্ন এলাকাতে দৃষ্টিহীন প্রায় 17 টি পরিবারে পূজোর স্পেশাল রেশন নিয়ে। বাগবাজার, শ্যামবাজার এলাকায়, দৃষ্টিহীন ভাইবোনদের কাছে পূজোর স্পেশাল রেশন পৌঁছে দেওয়া হল ।


PETALS কুঁদঘাট ও সংলগ্ন এলাকায় দৃষ্টিহীন ভাইদের কাছে পূজোর স্পেশাল রেশন নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল। মহানবমীর ভান্ডারাঃ মায়ের পূজো তো হয় কিন্তু পূজোর ভোগের প্রসাদ যখন অন্য মানুষকে দিতে হয় তখন কেন তার গুণগতমানটা কমে যায় কেউ বলতে পারেন? রেশনের চাল দিয়ে রান্না করে কেন মায়ের ভোগ এর সাথে সেটা মিশিয়ে দেওয়া হয়? আবার PETALS এর মাথাটা নড়ে উঠলো। বলল, হবেনা চলবেনা এসব। ছুটে গেল বাবার ধামে তারকেশ্বরে। শ্রী তোতাপুরী আশ্রমের মহারাজ এর সাথে কথা বলে ঠিক করা হল সমান ভাবে মায়ের প্রসাদী গোবিন্দভোগ চাল ও সোনা মুগ ডালের খিচুড়ি ও পায়েস যা আমার আপনার প্রিয় ও ক্ষমতার মধ্যে সেটা তুলে দিতে হবে মায়ের অভুক্ত সন্তানদের হাতে। কিন্তু ছোট আশ্রম মহারাজের ক্ষমতাও সীমিত। সেই সীমিত ক্ষমতা কে অসীম করার জন্য PETALS আবার বলল সাথে আছি। মহানবমীর দিন প্রায় 500 জন মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল মায়ের ভোগের সেই একই প্রসাদ।

 


কিছু মানুষ যদিও পেটালস এর কর্মকাণ্ডকে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট বলেছেন কিন্তু আমরা হেসে বলি, " বেশ করেছি ", কারণ আপনারা বলে চলে যাবেন, আর আমরা দায়িত্ব নিতে শিখেছি। তাই অ্যাডভার্টাইজমেন্ট চলবে। এই অ্যাডভার্টাইজমেন্টের জোরে আজ বহু মানুষ নিজে এগিয়ে এসে রেশন তুলে দিয়ে গেছেন, আর সেই 40 /45 কিলো ওজনের রেশন কাঁধে করে নিয়ে PETALS এর কর্মীরা ছুটে বেড়িয়েছে শহর থেকে গ্রামে গঞ্জে যার নাম হয়তো আপনারা কোনদিন শোনেননি। কিছু মানুষ বাড়িতে বসে বুড়ো আঙুল চেপে ফেসবুকে প্রোফাইল খুলে সমালোচনা লিখছেন কিন্তু অ্যাডভার্টাইজমেন্ট যারা করছে তারা কিন্তু দৌড়ে বেড়াচ্ছে। পিছিয়ে পড়া মানুষদের ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে তাঁদের চিন্তা মুক্ত করতে, তাঁদের পরিবারের দায়িত্ব নিতে। তাই মনে হয় এই রকম অ্যাডভার্টাইজমেন্ট চলা উচিত সারাবছর ধরে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বড় ব্যানারে, যাতে মানুষের কোন একবার বিবেকটা জেগে ওঠে,

" ছিঃ, আমি বেঁচে আছি আর ওরা ভালো নেই!

এটার নাম কি বেঁচে থাকা?? "

 


সত্যি বলছি আমরা PETALS রা খুব ভালো কাটিয়েছি পূজোটা। আপনাদের অভিজ্ঞতাটা কিন্তু শুনতে চাই। কে কেমন ভাবে কাটালেন, কটা পূজা দেখলেন, কি করবো আমাদের ভাগ্যে তো কিচ্ছু জোটেনি। তবু বলছি সবার পূজোর থেকে আমাদের পূজো খুব ভালো কেটেছে। নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে ছড়িয়ে দিয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে এক পরম তৃপ্তি ও আনন্দসুখ অনুভব করেছি যার কাছে বাকি সব আনন্দ তুচ্ছ।

সামনের বছর আমাদের মত পূজো কাটিয়ে একবার দেখুন না কেমন লাগে; এই নেশা কিন্তু ছাড়ার নয়, একবার ধরে গেলে আর এর থেকে মুক্তি নেই। Choice আপনার হাতে।

Comments

Popular posts from this blog

বঙ্গ গৌরব উৎসব সম্মান পেলেন মৌসুমী দাস

বেলঘরিয়া থানার পুলিশের উদ্যোগে উদ্বার বেআইনি একাধিক স্কুটি

সমাজ সেবা করাই নেশা নীলকণ্ঠের